আর সরকারি কোনো দপ্তরে গিয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। জন্মের শংসাপত্র বা বার্থ সার্টিফিকেট (Birth Certificate) -এর মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি নেওয়ার জন্য। এতদিন পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি অফিসে গিয়ে ছুটোছুটি করতে হতো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড থেকে যেকোনো সরকারি কাজেই জন্ম শংসাপত্রের প্রয়োজন। যদি কারো এই বার্থ সার্টিফিকেট নিতে একটু দেরি হতো, তাহলে সেই ক্ষেত্রে তো কোনো কথাই নেই। একের পর এক অফিস ঘুরতে ঘুরতে নাজেহাল পরিস্থিতি হয়ে যেত।
ঠিক একইভাবে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে ডেথ সার্টিফিকেট (Death Certificate) পাওয়ার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি দেখা যেত। এবার সেই দিকে নজর দিয়েই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে একেবারে অনলাইনে ঘরে বসেই জন্ম এবং মৃত্যুর শংসাপত্র হাতের মধ্যেই পাওয়া যাবে (Online Birth and Death Certificate Facility by West Bengal Govt.)।
Birth and Death Certificate Apply Online 2024
এমনিতেই ধীরে ধীরে সরকারি অধিকাংশ কাজ এখন অনলাইনেই করা যায়। ফলে এখন আর সাধারণ মানুষকে কোনো জায়গায় গিয়ে অযথা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় না। একশ্রেণীর সরকারি অফিসার এবং কর্মীদের খারাপ ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হতেন। সেই সমস্যা থেকে এবার মুক্তি পেতে চলেছে রাজ্যবাসী। অন্যান্য সমস্ত কিছুর মতোই বার্থ এবং ডেথ সার্টিফিকেট (Birth and Death Certificate Apply Online) ঘরে বসে অনলাইনে করে ফেলা সম্ভব হবে। রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইট janma-mrityutathya.wb.gov.in এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রামাণ্য নথি এবং কাগজপত্র জোগাড় করে রাখতে হবে।
জন্ম সার্টিফিকেটের জন্য কি কি কাগজপত্র দরকার হবে?
- শিশুর জন্ম যদি কোনো হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে হয়ে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে সেই হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের চিকিৎসকের জারি করা সার্টিফিকেট অবশ্যই লাগবে।
- শিশুর জন্ম যদি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বহু সময় বাড়িতেও স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীয় তত্ত্বাবধানে হয়, তাহলে স্থানীয় কোনো এমবিবিএস চিকিৎসক, গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা হলে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এবং শহর এলাকা হলে মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষের থেকে সিলমোহর ও স্বাক্ষর সমেত সার্টিফিকেট লাগবে।
- নবজাতক শিশুর পিতা-মাতার ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড সহ যাবতীয় তথ্য অনলাইনে আবেদনের সময় প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুন » EWS সার্টিফিকেট পাবার নিয়মে পরিবর্তন, এবার থেকে OBC প্রার্থীরাও সুযোগ পাবেন
জন্ম সার্টিফিকেট অনলাইনে কিভাবে আবেদন করবেন?
এবার দেখে নেওয়া যাক, অনলাইনে কিভাবে আবেদন করবেন জন্ম সার্টিফিকেট (How to Apply for Birth Certificate) –
- প্রথমেই janma-mrityutathya.wb.gov.in ওয়েবসাইটে গিয়ে Citizen Service এ গিয়ে Birth অপশন থেকে Apply For New Registration অপশন বেছে নিতে হবে। সেখানে ক্লিক করে শিশুর অভিভাবকের মোবাইল নম্বর দিতে হবে।
- ওই মোবাইল নম্বরেই যাবতীয় আপডেট এবং ওটিপি আসবে। এবার মোবাইল নম্বরে OTP আসলে সেটা দিয়ে নির্ধারিত পেজ খুলতে হবে।
- এরপর শিশুর নাম, লিঙ্গ, পদবী লিখে কোথায় জন্ম হয়েছে অর্থাৎ যদি কোনো হাসপাতাল (সরকারি/ বেসরকারি) অথবা নার্সিংহোমে হয়ে থাকে, তাহলে সেই হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের অপশন বেছে নিয়ে নাম দিতে হবে। ঠিকানা হিসেবে পঞ্চায়েত বা পুরসভা এলাকার নাম, ব্লকের নাম, জেলা, রাজ্য সিলেক্ট করে দিতে হবে। যে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে জন্মগ্রহণ করেছে শিশুটি, সেখানকার মেডিকেল অফিসারের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট (Discharge Certificate issued by Medical Officer) আপলোড করতে হবে।
- শিশুটির পিতা-মাতার যাবতীয় তথ্য দিতে হবে। নাম, পদবী, ঠিকানা, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড সহ সমস্ত নথি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
- Form-1 ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে তা পূরণ করতে হবে। এই পূরণ করা প্রিন্ট আউট নিজের কাছে রেখে দিতে হবে। আবেদনপত্র পূরণ হয়ে গেলে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হবে। সেই রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি সঙ্গে রেখে দিতে হবে।
- পরবর্তীতে এই রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেন এবং সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। বার্থ সার্টিফিকেট বা জন্মের শংসাপত্র তৈরি হয়ে গেলে মোবাইল নম্বরে SMS আসবে।
আরও পড়ুন » সবাইকে বানাতে হবে ABC ID Card, কিভাবে আবেদন করবেন এবং কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে
মৃত্যুর শংসাপত্রর জন্য কিভাবে আবেদন করবেন?
এবার দেখে নেওয়া যাক, ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যুর শংসাপত্রর জন্য কিভাবে আবেদন করবেন (How to Apply for Death Certificate) –
- একইভাবে প্রথমেই janma-mrityutathya.wb.gov.in ওয়েবসাইটে গিয়ে Citizen Service এ গিয়ে Death অপশন থেকে Apply For New Registration অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- এরপরে মৃত ব্যক্তির নাম, লিঙ্গ, পদবী, ঠিকানা সহ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড স্ক্যান করে ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির মৃত্যু যে জায়গায় হয়েছে, যদি তা কোনো হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে হয়ে থাকে, তাহলে মেডিকেল অফিসারের ডেথ সার্টিফিকেট দিতে হবে। সেই স্থানের ঠিকানা গ্রাম পঞ্চায়েত বা পুরসভা, ব্লক, জেলা, রাজ্য যাবতীয় তথ্য আপলোড করতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা সহ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি সমেত যাবতীয় তথ্য জমা দিতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির বাড়ির ঠিকানা, পঞ্চায়েত বা পুরসভা, রাস্তার নাম এবং নম্বর, জেলা, রাজ্য সহ সমস্ত তথ্য আপলোড করতে হবে।
জন্ম-মৃত্যু তথ্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: Link
এই পদ্ধতিতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে একেবারে ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম এবং মৃত্যুর শংসাপত্র খুব সহজেই বের করে নিতে পারবেন।
Written by Rajib Ghosh.