Jomir Dolil Download Online: সম্পত্তি সংক্রান্ত যে কোনো কাজের জন্য দলিলের সার্টিফায়েড কপি একটি অপরিহার্য দলিল। এতদিন এই কপি সংগ্রহ করতে রেজিস্ট্রি অফিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হতো, দালালদের হাতে হাজার হাজার টাকা গুনতে হতো। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। সরকার একটি অত্যন্ত সুবিধাজনক ব্যবস্থা চালু করেছে যার মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে জমির দলিল ডাউনলোড করতে পারবেন।
বিষয় সূচী ~
সম্পত্তির দলিল ডাউনলোডের নতুন অনলাইন ব্যবস্থা
১৯৮৫ সাল থেকে রেজিস্ট্রেশন হওয়া প্রায় তিন কোটি দলিল ডিজিটাইজ করা হয়েছে এবং এখন সেগুলি অনলাইনে পাওয়া যাবে। এই নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে আপনি মাত্র কয়েক ক্লিকে, নামমাত্র সরকারি ফি দিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় দলিলের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। আসুন জেনে নেই কীভাবে এই সুবিধা নিতে হবে এবং এর পিছনের পুরো প্রক্রিয়া।
অনলাইনে দলিল ডাউনলোড করার সুবিধাসমূহ
অনলাইনে জমির দলিল ডাউনলোড করার অনেক সুবিধা রয়েছে –
- সময় বাঁচবে: রেজিস্ট্রি অফিসে যাতায়াত ও লাইনে দাঁড়ানোর সময় বাঁচবে।
- খরচ কম: দালালদের দেওয়া হাজার হাজার টাকার বদলে মাত্র ১০০-২০০ টাকার মধ্যে দলিল পাওয়া যাবে।
- স্বচ্ছতা বাড়বে: দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য ও দুর্নীতি কমবে।
- ২৪×৭ সুবিধা: যে কোনো সময়ে, যে কোনো জায়গা থেকে আবেদন করা যাবে।
- নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য: সরকারি পোর্টাল থেকে সরাসরি প্রামাণিক দলিল পাওয়া যাবে।
কোন কোন দলিল অনলাইনে পাওয়া যাবে?
বর্তমানে ১৯৮৫ সাল থেকে রেজিস্ট্রেশন হওয়া সমস্ত দলিল অনলাইনে পাওয়া যাবে। এর মধ্যে রয়েছে –
- জমির দলিল
- বাড়ির দলিল
- বিক্রয় চুক্তি
- দান নামা
- বন্ধকি দলিল
- নামজারি সংক্রান্ত নথি
- ওয়ারিশ সার্টিফিকেট
সরকারের ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে এবং ধীরে ধীরে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন হওয়া দলিলগুলিও অনলাইনে উপলব্ধ করা হবে।
অনলাইনে দলিল ডাউনলোড করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া
প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট
অনলাইনে জমির দলিল ডাউনলোড করার জন্য আপনি দুটি সরকারি পোর্টাল ব্যবহার করতে পারেন –
- ডিরেক্টরেট অফ রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড স্ট্যাম্প রেভিনিউ পোর্টাল (wbregistration.gov.in)।
- ই-ডিসট্রিক্ট পোর্টাল (edistrict.wb.gov.in)।
স্টেপ বাই স্টেপ প্রসেস
১) প্রথমে উপরোক্ত যেকোনো একটি ওয়েবসাইটে যান।
২) নতুন ব্যবহারকারী হলে রেজিস্ট্রেশন করুন। পুরানো ব্যবহারকারী হলে লগইন করুন।
৩) এরপর “Certified Copy Request” অপশনে ক্লিক করুন।
৪) সম্পত্তির বিবরণ যেমন, দলিল নম্বর, রেজিস্ট্রেশনের বছর, সম্পত্তির অবস্থান (জেলা/তহসিল), মালিকের নাম এই তথ্যগুলি প্রদান করুন।
৫) প্রয়োজনীয় ফি অনলাইনে জমা দিন। ফি সম্পর্কিত বিস্তারিত আমরা পরবর্তী বিভাগে আলোচনা করব।
৬) আবেদন জমা দিন এবং একটি ট্র্যাকিং নম্বর পাবেন।
৭) আপনার আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করুন। অনুমোদন পাওয়ার পর সার্টিফায়েড কপি ডাউনলোড করুন।
অনলাইন সুবিধার সাথে সাথে পরিষেবাকে আরও সহজলভ্য করার জন্য বাংলা সহায়তা কেন্দ্রেও এই সেবা দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা অনলাইন পদ্ধতিতে সাবলীল নন, তাঁরা সেখানে গিয়ে সহায়তা নিতে পারেন।
অনলাইনে দলিল ডাউনলোডের সরকারি খরচ
অনলাইনে জমির দলিল ডাউনলোড করার সরকারি খরচ অত্যন্ত কম। নিচে বিভিন্ন ফি’র বিবরণ দেওয়া হলো –
ফি’র ধরণ | খরচ |
---|---|
আবেদন ও কোর্ট ফি | ১০ টাকা |
নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প | ১০ টাকা |
সার্চিং ফি | ২ টাকা |
ইনস্পেকশন ফি | ২ টাকা |
প্রতি পাতা কপি | সাড়ে ৭ টাকা |
সাধারণত একটি সার্টিফায়েড কপি পেতে মোট খরচ পড়বে ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে, যা দালালদের মাধ্যমে হাজার থেকে কয়েক হাজার টাকা খরচের তুলনায় অত্যন্ত কম।
রেজিস্ট্রি অফিসে দালাল চক্রের শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। এদের কারণে সাধারণ মানুষকে অনেক অর্থিক ক্ষতি ও হেনস্থার শিকার হতে হয়। কিছু আইনজীবী এবং সরকারি কর্মচারীদের একাংশও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
নতুন অনলাইন ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এই দালাল চক্রের প্রভাব কমবে এবং সাধারণ মানুষ স্বচ্ছভাবে সেবা পাবেন। সরকার এই ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করার জন্য ধাপে ধাপে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত রেজিস্ট্রি হওয়া দলিলগুলিও ডিজিটাইজ করার কাজ শুরু করেছে।
কখন রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে?
যদি কোনো দলিল অনলাইনে না পাওয়া যায়, কেবল তখনই রেজিস্ট্রি অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে। এক্ষেত্রে আপনাকে অনলাইনে আবেদন করে “দলিল অনলাইনে উপলব্ধ নেই” এমন উত্তর পাওয়ার পর রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে হবে। এক্ষেত্রেও আগের মতো দালালদের উপর নির্ভর করার দরকার নেই। সরাসরি অফিসে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
জমির দলিলের সার্টিফায়েড কপি কেন প্রয়োজন?
জমির দলিলের সার্টিফায়েড কপির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, যেমন –
- পরচা সংক্রান্ত কাজে
- পুর এলাকায় মিউটেশনের জন্য
- বিদ্যুৎ মিটারের নাম বদলে
- ব্যাংক লোন নেওয়ার সময়
- সম্পত্তি বিক্রির সময় প্রমাণ হিসেবে
- আদালতে মামলার সময়
- স্কুল-কলেজে ভর্তির সময় ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে
প্রয়োজনীয় সতর্কতা
যদি আপনার জমির দলিল ডাউনলোড করার সময় কোনো সমস্যা হয়, তাহলে নিচের বিষয়গুলি খেয়াল রাখুন –
- সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করুন। ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
- দলিল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশনের বছর সঠিকভাবে লিখুন।
- অনলাইন পেমেন্ট করার সময় ইন্টারনেট সংযোগ ভালো থাকা জরুরি।
- পোর্টালে লগইন করার সময় আপনার পাসওয়ার্ড গোপন রাখুন।
- যদি কোনো টেকনিক্যাল সমস্যা হয়, তবে হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।
অনলাইনে জমির দলিল ডাউনলোড করার ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ। এতে সময়, অর্থ ও শ্রম সবই বাঁচবে। দালাল চক্রের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং স্বচ্ছতা বাড়বে। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি অন্যান্য সরকারি সেবাও এভাবে ডিজিটাল করা হবে।